স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয়? এই প্রশ্নটির উত্তর অনেকেই জানে না ।ভারত উৎসবে পরিপূর্ণ একটি দেশ ।এখানে বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করা হয় ,যেগুলোর মধ্যে স্বাধীনতা দিবস অন্যতম।আজ আমরা জানবো স্বাধীনতা দিবস কী এবং স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয় ?
স্বাধীনতা দিবস হল এমন একটা উৎসব যেটা ধৰ্ম বর্ন নির্বিশেষে সবাই উৎসাহের সাথে পালন করে থাকে। এই উৎসবটি ভারত দেশের সংস্কৃতির সাথে জড়িত নয় এটি জড়িয়ে আছে দেশের সঙ্গে ।স্বাধীন মানে মুক্ত ও দিবস মানে দিন ।অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবস মানে মুক্তির দিন । তাই ভাবলাম আজকে ,স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয়? এই সম্পর্কে কিছু জানি ।তো আর দেরি না করে শুরু করা যাক ।
স্বাধীনতা দিবস কী ?
স্বাধীনতা দিবসের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Independence Day . আপনি যদি মনে করেন যে স্বাধীনতা দিবস কেবল ভারত দেশে পালিত হয় তাহলে দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে আপনি ভুল ভাবছেন ।পৃথিবীর ছোট বড়ো প্রায় সব ধরনের দেশেই স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় ।কারণ প্রায় প্রত্যেক দেশই অতীতে কোনো না কোনো শক্তির পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ ছিল ।আর সময় অতিক্রম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক এক করে প্রতিটি দেশই সেই পরাধীনতার শিকল ভেঙ্গে দিয়েছে।ও তারা নিজেরা এক একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে মাথা চেড়ে উঠেছে ।কিন্তু তাদের স্বাধীনতা দিবস পালনের তারিখ এক নয় ।কারণ সব দেশ এক সঙ্গে স্বাধীনতা পায়নি ।কেউ দেরি করে স্বাধীনতা পেয়ে তো কেউ তাড়াতাড়ি পেয়েছে।কিন্তু পেয়েছে সবাই ।আমাদের দেশে 15ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়।ভারতবর্ষ কবে স্বাধীনতা লাভ করে?
1947সালের15ই আগস্ট ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করে ।15ই আগস্ট ভারতে স্বাধীনতা দিবস পালন কেন করা হয়?
১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। সেই ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতেই প্রতি বছর ১৫ অগস্ট তারিখটি ভারতে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে অহিংস, অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলন এবং বিভিন্ন চরমপন্থী গুপ্ত রাজনৈতিক সমিতির সহিংস আন্দোলনের পথে পরিচালিত এক দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ভারত স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। স্বাধীনতার ঠিক পূর্ব-মুহূর্তে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত হয় এবং তার ফলে ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম ঘটে। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণের পর দিল্লির লাল কেল্লার লাহোরি গেটের উপর ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সেই থেকেই প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারা দেশে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়।![]() |
দিল্লির লালকেল্লা |
স্বাধীনতা লাভের ইতিহাস
ভারতে মুঘল শাসন চলাকালীন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যবসা বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে নিয়ে ভারতে প্রবেশ করে ।কিন্তু পরবর্তীকালে এই কোম্পানির মধ্যেএ দেশ শাসন করার ইচ্ছা জন্মায় ।আর এই ইচ্ছা পূরণ করার জন্য কূটনীতির সাহায্যে ও এখানকার মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে এই দেশকে দখল করে নেয় ।তারা এই দেশের সম্পদ প্রচুর পরিমানে লুটে ও সেগুলোকে ব্রিটিশে পাঠিয়ে দেয় আর এই দেশের মানুষের উপর অত্যাচার চালায় । এই অত্যাচার অসহনীয় হয়ে ওঠে ।যার ফলে দেশে ছোট বড়ো অনেক বিদ্রোহ ঘটে ।এই বিদ্রোহ গুলোর অন্যতম ছিল 1857 সালের মহাবিদ্রোহ ।যা অসফল হলেও ব্রিটিশ শাসনের ভিত নাড়িয়ে দেয় ।এ থেকেই ব্রিটিশ সরকার বোঝতে পারে যে ভারতে তাদের শাসন করার দিন ফুরিয়ে এসেছে ।এর প্রায় 90 বছর পর ভারত স্বাধীনতা লাভ করে।স্বাধীনতা লাভের জন্য এদেশের অনেক বীর ,যেমন-ঝাঁসির রানী লক্ষীবাই, ভকৎ সিং,নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ইত্যাদি, আত্মবলিদান দিয়েছে । এই স্বাধীনতা লাভে তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য ।
১৯২৯ সালের দিকে কংগ্রেসের সভাপতি থাকার সময় 'পূর্ণ স্বরাজে'র ডাক দেন জওহরলাল নেহরু। তখন ২৬ জানুয়ারিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পছন্দ করা হয়। ১৯৩০ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত কংগ্রেস দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে। তবে তা ভারতে বর্তমানে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৯৫০ সালের ওই দিনে স্বাধীন ভারতের প্রথম সংবিধান কার্যকর হয়।
ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে ১৯৪৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। এ নিয়ে ভারতীয় রাজনীতিবিদ সি রাজাগোপালাচারি লেখেন, যদি ১৯৪৮ সালের জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়, তবে হস্তান্তরের জন্য কোনও ক্ষমতাই থাকবে না। তখন মাউন্টব্যাটেন সময়কে এগিয়ে নিয়ে আসেন ১৯৪৭ সালের অগস্টে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭ পাশ হয়। ওই আইনে ১৫ অগস্টকেই ধরা হয় ব্রিটিশ ভারতের শেষ দিন।প্রায় 200বছর পর ইংরেজদের হাত থেকে ভারত স্বাধীন হয়।
ভারতে ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালিত হলেও পাকিস্তানে ১৪ অগস্ট পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস। অথচ ভারত স্বাধীনতা আইন অনুযায়ী একটিই দিন থাকার কথা ছিল।
পাকিস্তানে প্রথম স্মারক ডাকটিকেটে কিন্তু বলা আছে ১৫ অগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীন পাকিস্তানে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দেশটির প্রথম গভর্নর জেনারেল মহম্মদ আলি জিন্না বলেন, '১৫ অগস্ট স্বাধীন এবং সার্বভৌম পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস।'
১৯৪৮ সাল থেকে পাকিস্তান ১৪ অগস্টকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করতে থাকে। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট রাতটি ছিল রমজান মাসের ২৭ তারিখ। সালটি ছিল ১৩৬৬ হিজরি। ২৭ রমজানের রাতটিকে মুসলমানরা পবিত্র রজনী হিসেবে বিবেচনা করেন। সেই কারণেই সেখানে ১৪ অগস্ট পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস।
স্বাধীনতা দিবস কীভাবে পালন করা হয়?
প্রতি বছর ১৫ অগস্ট দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। অনুষ্ঠানটি জাতীয় চ্যানেল দূরদর্শনের সাহায্যে সারা দেশে সম্প্রচারিত হয়। রাজ্য রাজধানীগুলিতেও পতাকা উত্তোলন-সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অন্যান্য শহরে রাজনৈতিক নেতৃবর্গ নিজ নিজ কেন্দ্রে পতাকা উত্তোলন করেন। নানা বেসরকারি সংস্থাও পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্কুল-কলেজেও তেরঙা উত্তোলন ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা এই উপলক্ষে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সাজপোশাক পরে শোভাযাত্রা করে।আশা করছি আপনি এই আর্টিকল পড়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন ।যদি এটি ভালো লেগে থাকে তবে শেয়ার ও কমেন্ট করুন ।ধন্যবাদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন