রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০

মহরম | মহরমের ইতিহাস | মহরমের তাৎপর্য


ভারত শুধুমাত্র একটি ধর্মের দেশ নয়।এটি বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে গঠিত একটি দেশ।আর সেই জন্য ভারতে অনেক ধরণের উৎসব পালন করা হয় এই সব উৎসবের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলো মহরম। যা ইসলাম ধর্মের একটি পবিত্র উৎসব। আপনার মনে যদি মহরম কী ?, মহরমের তাৎপর্য কী ? আর মহারোমের ইতিহাস কী ? এই ধরণের প্রশ্ন জন্ম নেয় তবে আমাদের এই আর্টিকেল টি পড়ে আপনার জিজ্ঞেসা দূর করতে পারবেন।

মহরম, মহরমের ইতিহাস, মহরমের তাৎপর্য


মহরম কী?


মহরম মুসলিমদের একটি পবিত্র উৎসব।এটি খুশির উৎসব নয়।এটি একটি শোক পালনের উৎসব। তাছাড়া, মহরম হিজরি অব্দের অর্থাৎ ইসলামিক ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস। মুসলিমদের ক্যালেন্ডার অনুসারে 4 টি পবিত্র মাসের মধ্যে একটি পবিত্র মাস হলো এই মহরম মাস। এই মাসের ১০ তারিখ আশুরা পালন করা হয়। মহরম উৎসবটিতে হজরত হুসেন কে স্মরণ করা হয়।

মহরমের তাৎপর্য


মহরম মাসটি হিজরি অব্দের চারটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মাসের মধ্যে অন্যতম একটি। হজরত মহম্মদ এই মাসেই  ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেছিলেন বলে মনে করা হয়। এই মাসে তিনি যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
মহরম মাসের ১০ তারিখটিও বিভিন্ন কারণে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনটি  পুণ্য অর্জনের ও শোকপালনের দিন। ইসলাম ধর্মমতে মহরম মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ্‌তালা আসমান-জমিন, বেহেস্ত-দোজখ,হাওয়া-পানি চন্দ্র-সূর্য ইত্যাদি-সহ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি আজকের দিনেই  হজরত আদমকেও সৃষ্টি করেছিলেন। মহাপ্লাবনের সময় হজরত নুহুর নৌকা এই দিনেই জুদি পাহাড়ের পাদদেশে জমি পেয়েছিলেন। পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে, এই আশুরার দিনেই অনুষ্ঠিত হবে কেয়ামত।
রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হল আশুরার রোজা। আশুরার দিন রোজা রাখলে এবং বিশেষ নামাজ আদায় করলে অধিক পুণ্য লাভ হয়। হজরত মহম্মদ বলেছেন, আশুরার দিন কোনো ব্যক্তি যদি তাঁর পরিবারের জন্য মুক্তহস্তে ব্যয় করেন, তবে আল্লাহপাক তাঁকে সারা বছরের সচ্ছলতা দান করবেন। তাই ইসলাম বা মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে আশুরার দিনটি পালন করেন।

মহরমের ইতিহাস


মহরম উৎসবটির সাথে ইতিহাসের এক ঘটনা জড়িয়ে আছে।সেটি হল-হিজ্জরি ৬১ অব্দে ১০ মহরম মহম্মদের আদরের দৌহিত্র, ফতিমা বিবির পুত্র হজরত হুসেন, পরিবার ও অনুগামী-সহ কারবালা প্রান্তরে এজিদের সঙ্গে এক অসম যুদ্ধে শহিদ হয়েছিলেন। এই নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডে স্বৈরাচারী এজিদের হাত থেকে হুসেনের ৬ মাসের শিশুপুত্র আলি আসগরও রক্ষা পাননি। এর কিছু দিন আগেই এজিদের ষড়যন্ত্রে ফতিমা-আলির জ্যেষ্ঠপুত্র হজরত হাসানকে হত্যা করেছিলেন তাঁরই এক স্ত্রী।
খলিফা মাবিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র এজিদ হিজরির ৬০ অব্দে নিজেকে মুসলিম দুনিয়ার খলিফা ঘোষণা করেন। শাসক হিসেবে তিনি ছিলেন স্বেচ্ছাচারী ও অত্যাচারী। এই সমস্ত কারণে হাসান-হুসেন তাঁকে খলিফা হিসেবে মান্যতা দিতে অস্বীকার করেন এবং পরিবার-পরিজন ও অনুগামীদের নিয়ে মদিনা ত্যাগ করে মক্কা চলে যান।
এই সময় ইরাকের অধিবাসীরা এজিদ ও ইরাকের শাসনকর্তা অবায়দুল্লার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বার বার হুসেনকে ইরাক যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে থাকে। ইরাকিদের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখে হুসেন সকলকে নিয়ে ইরাকের উদ্দেশে রওনা দিলেন। এ দিকে তখন এজিদের অধীনস্থ ইরাকের শাসনকর্তা হুসেনের অনুগামী মুসলিমদের খুঁজে বের করে হত্যা করতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় ইরাকিরা হুসেনকে খলিফা হিসেবে পেতে চাইলেও প্রাণভয়ে কেউ হুসেনের পাশে দাঁড়ানোর সাহস দেখাল না। এই সুযোগে ওবায়দুল্লা চার হাজার সৈন্য কারবালার প্রান্তরে দলবল সমেত হুসেনকে ঘিরে ফেলে ফেরাত নদীতে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দিল। পানি ছাড়া মানুষ কত ক্ষণ বাঁচবে? ছোট বাচ্চারা তৃষ্ণায় ছটফট করছে দেখে হুসেনের এক বিশ্বস্ত অনুগামী আব্বাস ফেরাত নদীতে পানি আনতে গেলেন। মশক ভরে পানি নিয়ে তিনি যখন শিবিরের উদ্দেশে দৌড়তে শুরু করেছেন, সেই সময় শত্রুপক্ষের তিরে তাঁর দুই হাত কাটা যায়। তিনি তখন মশকটি মুখে ধরে শিবিরের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেন। শিবিরে যে তাঁর প্রিয় হজরতের সন্তানেরা তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েছে। কিন্তু শিবিরে পৌঁছনোর আগেই বুকে তিরবিদ্ধ হয়ে শহিদ হয়ে গেলেন।
হুসেন এই অসহায় অবস্থায় বাধ্য হয়ে অবায়দুল্লার কাছে প্রস্তাব পাঠালেন, হয় তাঁদের মদিনায় ফিরতে দেওয়া হোক, তা না হলে এজিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে দেওয়া হোক। অবায়দুল্লা এই প্রস্তাবে রাজি হলেন না।
এ দিকে পানির জন্য শিশুরা বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে। হুসেনের কোনও অনুরোধ উপরোধ শত্রুপক্ষ শুনতে চাইল না। হুসেন তাঁর ছ’মাসের শিশুপুত্র আলি আসগরকে বুকে নিয়ে ফিরাত নদীর দিকে রওনা দিলে, পিতার কোলেই তিরের আঘাতে আসগর প্রাণ হারায়। এই অবস্থায় হুসেন যখন তাঁবুর বাইরে বসে সন্তানশোকে বিলাপ করছিলেন, সেই সময় তিরবিদ্ধ হয়ে তিনি শহিদ হয়ে গেলে শত্রুপক্ষ তাঁর মাথা কেটে এজিদের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
তাই মহরম মাস এলেই মুসলিম সম্প্রদায়ের স্মৃতিপটে কারবালার সেই মর্মান্তিক দৃশ্য ভেসে ওঠে। ইসলামের ইতিহাসে এ এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। যে অধ্যায় সারা বিশ্বের মুসলিমরা বেদনার অশ্রু দিয়ে হৃদয়ে লিখে রেখেছেন। তাই আসুরার দিন আখড়া বা মিছিলের মাধ্যমে এক প্রতীকী যুদ্ধের আয়োজন করা হয়। কোনও রকম শক্তি প্রদর্শন বা ভীতি প্রদর্শন এই নকল যুদ্ধের উদ্দেশ্য নয়। এই মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা নিজেরা নিজেদের আঘাত করেন এবং অশ্রুপাতের মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেন।

আশা করছি আপনি মহরম সম্পর্কিত এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন । এটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন