বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০২০

বাংলাদেশের শীর্ষ 10টি গ্রুপ অফ কোম্পানি





বাংলাদেশের শীর্ষ 10টি গ্রুপ অফ কোম্পানি সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য পেয়ে যাবেন এই পোস্টটিতে।তবে একদম সঠিক ভাবে তালিকা প্রকাশ করা খুব কঠিন একটা কাজ ।এই তালিকাটি পড়ার সুবিধার জন্য করা হয়েছে।এখানে আপনি বাংলাদেশের কোম্পানীগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন।

বাংলাদেশের কোম্পানি


​বাংলাদেশের অর্থনীতি খুব দ্রুত গতিতে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি  গ্রুপ অফ কোম্পানি এদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশের শীর্ষ 10টি গ্রুপ অফ কোম্পানি


১। বেক্সিমকো গ্রুপ:-


  এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান । সালমান এফ রহমান এবং তার ভাই ১৯৭২ সালে এর প্রতিষ্ঠা করেন।  বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৭০,০০০+ কর্মচারী রয়েছে। ১০০টি দেশেরও অধিক দেশে এই কোম্পানীর পণ্য রপ্তানি করা হয়।
এই গ্রুপ অফ কোম্পানির প্রধান ব্যবসাগুলো হল সিরামিক, ফার্মাসিউটিক্যালস, টেক্সটাইল, পাট, ইনফরমেশন টেকনোলজি, এভিয়েশন, মিডিয়া, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, নির্মাণ ও জ্বালানি।
বেক্সিমকো গ্রুপ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের অংশ, যার বাজার মূলধন প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই কোম্পানির ফার্মাসিউটিক্যালস বিভাগটির নাম হল বেক্সিমকো ফার্মা, যা লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ-এরও তালিকাভুক্ত।এছাড়াও এই কোম্পানির মালিকানাধীন রয়েছে কিছু উল্লেখযোগ্য কোম্পানি। এই গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমান এবং তার ভাইয়ের এবং কোম্পানির মিলিত অর্থ ও সম্পদের মোট পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।


২। এসিআই গ্রুপ:-


 এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় একটি গ্রুপ অফ কোম্পানি। কোম্পানিটি তাদের কার্যক্রম তিনটি বিভাগের মাধ্যমে পরিচালনা করে। বিভাগ তিনটি হল- ফার্মাসিউটিক্যালস, কনসিউমার ব্র্যান্ডস এবং কৃষিশিল্প সংক্রান্ত ব্যবসা। ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে(বর্তমান  বাংলাদেশ) ইম্পেরিয়াল কেমিক্যাল ইনডাসট্রিস (আইসিআই) -এর একটি অংশ হিসেবে এসিআই প্রতিষ্ঠিত হয়। জনাব এম আনিস উদদৌলা এসিআই এর প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে এই কোম্পানির প্রায় ৫,০০০ কর্মচারী রয়েছে।


৩। নাভানা গ্রুপ:-


 নাভানা গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান জনাব শফিউল ইসলাম কামাল এবং তার অধীনেই সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু, পূর্বে এটি ইসলাম গ্রুপের একটি অংশ ছিল, যার চেয়ারম্যান ছিল জনাব জহুরুল ইসলাম। ওই সময় এই ইসলাম গ্রুপই বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ ব্যবসায়িক গ্রুপ ছিল।  কিন্তু বর্তমানে নাভানা গ্রুপ একটি পৃথক প্রতিষ্ঠান। নাভানা গ্রুপের রয়েছে পণ্য এবং প্রকল্প বিপণন(marketeer), নির্মাণ এবং রিয়েল স্টেট বিজনেস, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং আরও বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ও বিতরন।


৪। আবুল খায়ের গ্রুপ:-


 আবুল খায়ের গ্রুপ বাংলাদেশের একটি অন্যতম বৃহৎ গ্রুপ অফ কোম্পানিজ। এটি একটি তামাক বিপণন কোম্পানি হিসেবে ১৯৫৩ সালে তার যাত্রা শুরু করে। গ্রুপটির সদর দপ্তর বাণিজ্যিক রাজধানী চট্রগ্রামে । এই কোম্পানীর কার্যক্রম বর্তমানে বহু-ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়েছে। ভোগ্যপণ্য, ইস্পাত, সিমেন্ট, মার্বেল,সিরামিক, শিপিং ও ট্রেডিং ব্যবসা প্রভৃতি বর্তমানে এই কোম্পানির কার্যক্রমের আওতাভুক্ত।


৫। বসুন্ধরা গ্রুপ:-


 বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বৃহৎ  কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি হল বসুন্ধরা গ্রুপ। জনাব আহমেদ আকবর সোবাহান দ্বারা এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশ ও মানুষের জন্য এই স্লোগান নিয়ে ১৯৮৭ সালে এটি একটি রিয়েল স্টেট কোম্পানি হিসেবে তাদের কার্যক্রম শুরু করে, যার নাম ছিল ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (ইডব্লিউপিডি)।
এই কোম্পানি উন্নতি করতে থাকে এবং পরবর্তীকালে তারা কোম্পানির আকার বৃদ্ধি করতে থাকে।পরে তারা আরও নতুন নতুন বিভাগে বিনিয়োগ করা শুরু করে এবং এভাবে ধীরে ধীরে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারিত হতে থাকে। ১৯৯০ দশকের দিকে তারা আরও নতুন কিছু উদ্যোগ নেয়, যার মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, কাগজ, সজ্জা, টিস্যু পেপার এবং ইস্পাত উত্পাদন।এছাড়াও এই কোম্পানির রেডিও ক্যাপিটাল নামক ঢাকাকেন্দ্রিক F. M রেডিও স্টেশনও আছে। বর্তমানে এই কোম্পানির প্রায় ১৫,০০০ অধিক কর্মচারী রয়েছে।


৬। প্রান-আরএফএল গ্রুপ:- 


প্রান-আরএফএল গ্রুপ মূলত একটি খাদ্য সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ১৯৮১ সালে এর যাত্রা শুরু হয় এবং এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন আমজাদ খান চৌধুরি। যাত্রা শুরু কালে প্রাণ শুধুমাত্র ফলমূল ও শাকসবজি প্রক্রিয়াজাতের কাজ করত। ১৯৯৬ সালে আরএফএল পিভিসি বিভাগে তাদের কার্যকলাপ শুরু করে। এই কোম্পানী দেশের সেরা প্লাস্টিক তৈরীর কারখানা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে । বর্তমানে এই কোম্পানির প্রায় ৭৫,০০০ কর্মচারী রয়েছে।


৭। স্কয়ার গ্রুপ:-


শ্যামসন এইচ চৌধুরি এবং তার তিন  বন্ধু মিলে ১৯৫৮ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা হিসেবে স্কয়ার গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯১ সালে জনসাধারণের কাছে এই কোম্পানির পরিচয় প্রকাশিত হয় এবং বর্তমানে এটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত রয়েছে। ১৯৮৫ সাল থেকে এটি বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে একটি শক্তিশালী নেতৃত্বাধীন অবস্থা বজায় রেখেছে। বর্তমানে এটি বিশ্বের অন্যতম উচ্চ কার্যকারিতা সম্পন্ন একটি গ্রুপ অফ কোম্পানিসে পরিণত হতে চলেছে। এর কিছু উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হল স্কয়ার এগ্রো লিমিটেড,স্কয়ার টেক্সটাইল লিমিটেড,স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড প্রভৃতি।


৮। সিটি গ্রুপ:-


জনাব ফজলুর রহমান বাংলদেশের বেসরকারি ব্যবসা খাতের একজন প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি সিটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী এটি যাত্রা শুরু করে। যাত্রা শুরু কালে এই গ্রুপের নাম ছিল সিটি অয়েল মিলস এবং এটি একটি সরিষা তেল উৎপাদন ও বিতরণকারী কোম্পানি ছিল। তাদের সর্বপ্রথম প্রকল্পটি খুবই সফলভাবে পরিচালিত হয়েছিল, যার ফলে পরবর্তীতে তারা আরও নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা শুরু করে, যেমন- বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন, শিল্প ও বাণিজ্য।


৯। পারটেক্স গ্রুপ:-


 পারটেক্স গ্রুপ বাংলাদেশের আরেকটি বৃহৎ গ্রুপ অফ কোম্পানিস। এই গ্রুপের আওতাধীন পণ্যগুলো হল খাদ্য এবং পানীয়, ইস্পাত, রিয়েল এস্টেট, আসবাবপত্র, কৃষি ব্যবসা, প্লাস্টিক ইত্যাদি। শিল্পপতি এমএ হাশেমের হাত ধরে ১৯৫৯ সালে এর যাত্রা শুরু হয়, যা ওই সময় মূলত তামাকের ব্যবসা করত।
​বর্তমানে পারটেক্সের মালিকানায় প্রায় ৪০ টি পৃথক অধীনস্থ কোম্পানি রয়েছে যা তামাক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য, আসবাবপত্র, টেক্সটাইল এবং আইটি সেক্টর সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত। ব্যবস্থাপনা ও অধীনস্থ কোম্পানিগুলোর উন্নতির জন্য বর্তমানে এটি ২টি শাখায় ভাগ হয়ে গিয়েছে। 


১০। আনন্দ গ্রুপ:-


 এটিও বাংলাদেশের একটি বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৩ সালে একটি আনন্দ কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়, যার নাম ছিল আনন্দ বিলডার্স। আব্দুল্লাহেল বারি ফারিনা ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা। এই গ্রুপের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- জাহাজ নির্মাণ, ভারী প্রকৌশল, বস্ত্র, রিয়েল এস্টেট এবং শিপিং। এদের মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড শ্লিপঅয়েস লিমিটেড। বাংলাদেশের বেসরকারি শিপইয়ার্ডগুলোর মধ্যে এটিই সর্ববৃহৎ।

এছাড়াও রয়েছে কিছু উল্লেখযোগ্য কোম্পানী যেগুলো বাংলাদেশের অর্থিনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে।যেমন-ব্রাক, ইস্পাহানী, বিএসআরএম, আকিজ গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ ইত্যাদি।


আশা করছি আপনি এই পোস্টটি পরে উপকৃত হয়েছেন। ধন্যবাদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন